Saturday, November 21, 2020

জোনাথন সুইফট 'র কিছু মহামূল্যবান “অমৃত বাণী”



"আমি চলে গেলে যদি কেউ না কাঁদে তবে আমার অস্তিত্বের কোন মূল্য নেই।"

"সবাই অনেকদিন বাঁচতে চায়, কিন্তু কেউই বুড়ো হতে চায় না।"

"যাকে শ্রদ্ধা করা যায় না, তাকে হৃদয় দিয়ে ভালবাসাও যায় না।"

"তোমার সময় যত বছর তত বছর কি তুমি বেচেছিলে?"

"মনের মত সঙ্গীর সাথে কথা বলে যতটা আনন্দ পাওয়া , তেমনি কোন কাজে পাওয়া যায় না।"

"পৃথিবীতে সৎ লোকের সংখ্যা বড়ই নগণ্য।"

"জীবন আর সংগীত ওতপ্রোতভাবে জডিত। সংগীতের মাঝে মানুষ বেঁচে থাকার আনুপ্রেরণা পায়।"

"জ্ঞানীরা মাথায় টাকা রাখে, হৃদয়ে নয়।"

—জোনাথন সুইফট
অমৃত বাণী Amrit Saying's
#AmritSayings #SufiSayings

Sunday, November 15, 2020

কবি আহমদ ছফা 'র কিছু মহামূল্যবান “অমৃত বাণী”



"কাউকে জ্ঞান বিতরণের আগে জেনে নিও যে তার মধ্যে সেই জ্ঞানের পিপাসা আছে কি-না। অন্যথায় এ ধরণের জ্ঞান বিতরণ করা হবে এক ধরণের জবরদস্তি। জন্তুর সাথে জবরদস্তি করা যায়, মানুষের সাথে নয়। হিউম্যান উইল রিভল্ট।"

"লোকে যাই বলুক, যাই অনুভব করুক, নিজের কাছে আমি অনন্য।"

"সরলতা এবং সততাই আমার মূলধন।"

"নারীরা নারীই, সঙ্গের সাথী, দুঃখের বন্ধু এবং আদর্শের অনুসারী নয়।"

"বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আর কারো রচনায় আমার মন বসে না।"

"কার্লাইল গ্যয়টেকে মহাপুরুষ মুহাম্মদের চাইতেও বড়ো মনে করেছেন। আমার ধারণা তিনি ভুল করেছেন। কারণ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) জীবনের স্বরুপ উপলব্ধি করে নিজস্ব মহিমায় স্থিত করেছেন। আর গ্যয়টে শুধু জীবনের মহিমা কীর্তন করেছেন। Prophetic genious –এর সাথে Poetic genious-এর এখানেই তফাৎ।"

"বাংলাদেশের আসল বস্তু বলে যদি কিছু থাকে তা হলো এর আমলাতান্ত্রিক কাঠামো। স্থবির, অনড়, লোভী, রিদয়হীন এবং বিদেশী শক্তির ক্রীড়নক হওয়ার জন্যে সর্বক্ষণ প্রস্তুত।"

"মানুষের শরীরে যেমন টিউমার থাকে, পণ্ডিতেরাও তেমনি সামাজিক টিউমার। প্রকৃতির গভীর গোপন রহস্য এরা বোঝে না। এরা বিশ্বাস করে ছাপার অক্ষরের প্রমাণ।"

"মহৎ সাহিত্যের মধ্যে একটা পবিত্র প্রাণশক্তি সব সময়েই থাকে। এটা এক ধরণের আশ্চর্য রহস্যময় শক্তি। অনেকটা মা-রেফাত বা আধ্যাত্মিক তত্ত্বের মতো।"

"মানুষ যে সমস্ত কথা বলে, ইতিহাসের কাছে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য সজ্ঞানভাবে লিখে যায়, ও সমস্ত প্রয়াসের মধ্যে একটা কপটতা রয়েছে।"

"একটি কাক আরেকটি কাকের মুখের খাবার কেড়ে নেয়ার জন্য যতরকম ধূর্ততার আশ্রয় নিয়ে থাকে, একজন কবি আরেকজন কবির প্রাপ্য সম্মানটুকু কেড়ে নেয়ার জন্য তাঁর চাইতে কিছু কম করে না।"

"নারী আসলে যা, তাঁর বদলে যখন সে অন্যকিছুর প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়, তখন তাঁর আকর্ষণ করার শক্তি হাজার গুণ বেড়ে যায়।"

"সম্যক পরিচয়ের অভাবই হচ্ছে মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষের মূল।"

"মাজারে মানুষ আসবেই। মানুষ আসবে কারণ সে দুর্বল অসহায় এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী।"

"লিখিত ইতিহাসের তলায় যে অবচেতন প্রবাহ ধীরে ধীরে কাজ করে যায়, তরুর চলাও সেরকম। কোন রকমের তাড়াহুড়ো নেই। জেগে আছে অথচ চাঞ্চল্য নেই, মানুষ তরুর কাছে এই মৌন জাগরণের স্বভাব আয়ত্ত করে, তবেই তপস্যা করতে শেখে।"

"পুরুষ একজন নারীর সঙ্গে যেভাবে সম্পর্ক নির্মাণ করে, সেভাবে একজন মানুষ একটি বৃক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করতে পারে।"

"বাঁধনহীন মানুষের অনেক বাঁধন।"

"বোকা লোকেরা বোকামীতে ভয়ানক চালাক। তারা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে বোকামীকে টিকিয়ে রাখতে চায়।"

"মাথায় খুস্কি, চোখের নিচে কালো দাগ এবং দাঁতের ব্যথা এ তিনটি যেনো আমি সাহিত্য, সঙ্গীত এবং রাজনীতির কাছে থেকে পেয়েছি।"

"বস্তুত একজন বিশ্বাসী মানুষ ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে যে ধরনের নির্মল আনন্দ অনুভব করেন, একজন ধর্মবিশ্বাসহীন মানুষ উন্নত সাহিত্য পাঠেও একই আনন্দ পেয়ে থাকেন।"

"আগেকার নবী পয়গম্বরেরা মানবজীবনের চরম পরম লক্ষ্য বলতে বুঝতেন পরমসত্তার জ্ঞান। এই কালের মানব জীবনের পরম লক্ষ্য কী? সম্ভবত মানুষের সমস্ত সম্ভাবনা বিকশিত করে তোলাই যদি বলা হয়, আশা করি অন্যায় হবে না।"

"সভ্যতা কোন দেশ জাতি বা সম্প্রদায় বিশেষের সম্পত্তি নয়— অথচ প্রতিটি তথাকথিত সুসভ্য জাতির মধ্যেই এই সভ্য অভিমান প্রচন্ডভাবে লক্ষ্য করা যায়।"

"রাষ্ট্র যা শিক্ষা দেয় তাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ মিথ্যার মিশাল থাকেই; এই মিথ্যা মারাত্মক, মানুষের মনোবৃত্তিকে বিষিয়ে তোলার ক্ষমতা এর অপরিসীম।"

"প্রতিটি রাষ্ট্র নিজস্ব প্রয়োজনে ইতিহাসকে বিকৃত করে।"

"বাঙালি মুসলমানের মন যে এখনও আদিম অবস্থায়, তা বাঙালি হওয়ার জন্যও নয় এবং মুসলমান হওয়ার জন্যও নয়। সুদীর্ঘকালব্যাপী একটি ঐতিহাসিক পদ্ধতির দরুণ তাঁর মনের উপর একটি গাঢ় মায়াজাল বিস্তৃত রয়েছে, সজ্ঞানে তাঁর বাইরে সে আসতে পারে না। তাই এক পা যদি এগিয়ে আসে, তিন পা পিছিয়ে যেতে হয়। মানসিক ভীতিই এই সমাজকে চালিয়ে থাকে।"

"যে জাতি উন্নত বিজ্ঞান, দর্শন এবং সংস্কৃতির স্রষ্টা হতে পারে না, অথবা সেগুলোকে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে গ্রহণ করতে পারে না, তাঁকে দিয়ে উন্নত রাষ্ট্র সৃষ্টিও সম্ভব নয়।"

"বাঙালি মুসলমানসমাজ স্বাধীন চিন্তাকেই সবচেয়ে ভয় করে। তাঁর মনের আদিম সংস্কারগুলো কাটেনি। সে কিছুই গ্রহণ করে না মনের গভীরে। ভাসাভাসাভাবে, অনেককিছুই জানার ভান করে, আসলে তাঁর জানাশোনার পরিধি খুবই সংকুচিত।"

"হিন্দু বর্ণাশ্রম প্রথাই এ দেশের সাম্প্রদায়িকতার আদিমতম উৎস। কেউ কেউ অবশ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকেই সাম্প্রদায়িকতার জনয়িতা মনে করেন। তাঁরা ভারতীয় ইতিহাসের অতীতকে শুধু ব্রিটিশ শাসনের দু’শ বছরের মধ্যে সীমিত রাখেন বলেই এই ভুলটা করে থাকেন।"

—কবি আহমদ ছফা
অমৃত বাণী Amrit Saying's

#AmritSayings #SufiSayings  

Friday, November 13, 2020

আল্লামা শেখ সাদী (রহ.)'র কিছু মহামূল্যবান “অমৃত বাণী”




“আমি আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় পাই। তারপর সেই মানুষকে ভয় পাই যে আল্লাহকে মোটেই ভয় পায় না।”

“যে সৎ হয়, নিন্দা তার কোন অনিষ্ট করতে পারে না।”

“কৃতজ্ঞ কুকুর অকৃতজ্ঞ মানুষ অপেক্ষা শ্রেয়।”

“একজন ঘুমন্ত মানুষ আরেকজন ঘুমন্ত মানুষকে জাগাতে পারেনা।”

“হিংস্র বাঘের উপর দয়া করা নীরিহ হরিনের উপর জুলুম করার নামান্তর।”

“এমনভাবে জীবনযাপন করে যেন কখনো মরতে হবে না, আবার এমনভাবে মরে যায় যেন কখনো বেচেই ছিল না।”

“আগন্তুকের কোনো বন্ধু নেই, আরেকজন আগন্তুক ছাড়া।”

“অজ্ঞের পক্ষে নিরবতাই সবচেয়ে উত্তম পন্থা। এটা যদি সবাই জানত তাহলে কেউ অজ্ঞ হত না।”

“যে মিথ্যায় মঙ্গল নিহিত তাহা অসৎ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত সত্য অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর।”

“প্রতাপশালী লোককে সবাই ভয় পায় কিন্তু শ্রদ্ধা করে না।”

“দেয়ালের সম্মুখে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় সতর্ক হয়ে কথা বলো, কারন তুমি জান না দেয়ালের পেছনে কে কান পেতে দাঁড়িয়ে আছে।”

“মুখের কথা হচ্ছে থুথুর মত, যা একবার মুখ থেকে ফেলে দিলে আর ভিতরে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই কথা বলার সময় খুব চিন্তা করে বলা উচিত।”

“মন্দ লোকের সঙ্গে যার উঠা বসা, সে কখনো কল্যানের মুখ দেখবে না।”

“দুই শত্রুর মধ্যে এমন ভাবে কথাবার্তা বল, তারা পরস্পরে মিলে গেলেও যেন তোমাকে লজ্জিত হতে না হয়।”

“বাঘ না খেয়ে মরলেও কুকুরের মতো উচ্ছিষ্ট মুখে তুলে না।”

“ইহ-পরকালে যাহা আবশ্যক তাহা যৌবনে সংগ্রহ করিও।”

“কোন কাজেই প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস করিও না।”

“তিন জনের নিকট কখনো গোপন কথা বলিও না- (ক) স্ত্রী লোক. (খ) জ্ঞানহীন মূর্খ. (গ) শত্রু।”

“হিংস্র বাঘের উপর দয়া করা নীরিহ হরিনের উপর জুলুম করার নামান্তর।”

“তুমি বদ, লোকে বলে সৎ-ইহা অপেক্ষা তুমি সৎ, লোকে বলে বদ, ইহা ভালো।”

“তুমি যদি উচ্চ সম্মান লাভ করিতে চাও তবে অধীনস্থ ব্যক্তিকে নিজের মতো দেখতে অভ্যাস করো। তাকে সামান্য মনে না করিয়া সম্মান করিবে।”

“লৌহদন্ড প্রস্তরগাত্রে যেমন বিদ্ধ হয় না, তেমনি কৃষ্ণ অন্তরেও সদুপদেশ ক্রিয়া করে না।”

—আল্লামা শেখ সাদী (রহ.)
অমৃত বাণী Amrit Saying's
#AmritSayings #SufiSayings 

Tuesday, November 10, 2020

মওলানা জালালুদ্দীন রুমি (রহ.)'র সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ



হযরত মওলানা জালালুদ্দীন রুমি (রহ.)'র সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ

জালালুদ্দিন মুহাম্মদ রুমি (ফার্সি: جلال‌الدین محمد رومی)(১২০৭ – ১৭ডিসেম্বর ১২৭৩), অথবা পরিচিত আছেন জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বালখী, মাওলানা রুমি, মৌলভি রুমি নামে তবে শুধু মাত্র রুমি নামে বেশি জনপ্রিয়। তিনি ছিলেন ১৩ শতকের একজন ফার্সি[৭][৮] সুন্নি[৯] মুসলিম কবি, আইনজ্ঞ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রিবাদী, সুফী।[১০] রুমির প্রভাব সীমানা এবং জাতি ছাড়িয়ে গিয়ছেঃ ফার্সি, তাজাকিস্তানী, তুর্কি, গ্রীক, পাস্তুন, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মুসলামানরা গত সাত দশক ধরে বেশ ভালভাবেই তাঁর আধ্যাত্নিক উত্তরাধিকারকে যথাযথভাবে সমাদৃত করে আসছে।[১১]

তাঁর কবিতা সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন শ্রেণীতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। রুমিকে যুক্তরাষ্ট্রের “সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি” [১২] এবং “বেস্ট সেলিং পয়েট” বলা হয়।[১৩][১৪] রুমির কাজ বেশিরভাগই ফার্সি ভাষায় লেখা, কিন্তু মাঝেমধ্যে তিনি স্তবকগুলোতে তুর্কি, আরবি এবং গ্রীক ভাষা[১৫][১৬][১৭] ব্যাবহার করেছেন। [১৮][১৯] তাঁর লেখা “মসনবী” কে ফার্সি ভাষায় লেখা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসাবে তুলনা করা হয়।[২০][২১] এখনও তাঁর লেখাসমূহকে মূল ভাষায় ব্যাপকভাবে পড়া হয় ইরান সম্রাজ্য এবং বিশ্বের ফার্সি ভাষার লোকেরা।[২২][২৩] অনুবাদসমূহও খুব জনপ্রিয়, বিশেষ করে তুর্কি, আজারবাইজান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ এশিয়ায়।[২৪] তাঁর কবিতা ফার্সি সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে, শুধু তাই নয় তুর্কি সাহিত্য, উসমানীয় তুর্কি সাহিত্য, আজারবাইজান সাহিত্য, পাঞ্জাবের কবিতা, হিন্দী সাহিত্য, উর্দু সাহিত্যকেও অনেক প্রভাবিত করেছে। এছাড়াও অন্যান্য ভাষার সাহিত্য যেমন তুর্কিচ, ইরানী, ইন্দো-আর্য, চাগাতাই, পাশতো এবং বাংলা সাহিত্য ও বাংলাকে প্রভাবিত করেছে।


নামঃ
তাঁকে ইংরেজীতে সবচেয়ে বেশি ডাকা হয় “রুমি” নামে। তাঁর পুরো নাম “জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ বালখী” বা “জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ রুমি”। বালখী এবং রুম দুটো তাঁর জাতিগত নাম অর্থাৎ “বালখ্‌” থেকে এবং “রুম” থেকে(রুম আনাতোলিয়ার ফার্সি এবং তুর্কি নাম)যথাক্রমে। রুমির নির্ভরযোগ্য জীবনিলেখক ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো এর ফ্রাঙ্কলিন লুইস এর মতে আনাতোলিয়া উপদ্বীপ ছিল বাইজেন্টাইন বা রুম সম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল যেটি পরবর্তীতে তুর্কির মুসলিমদের দখলে আসে, যেটি এখন পর্যন্ত আরব, পারস্য এবং তুর্ক নামে পরিচিত, যেটি ছিল রুম এর ভৌগলিক এলাকা। যেখানে অনেক ঐতিহাসিক ব্যাক্তিত্ত জন্মগ্রহণ করেছেন রুমি ছিলেন তাদেরই একজন। “রুমি” শব্দটি মূলত আরবিক যার অর্থ রোমান।[২৫] তবে তিনি ব্যাপকভাবে তাঁর উপনাম “মাওলানা” নামে পরিচিত।[৫][৭] মাওলানা একটি আরবিক শব্দ যার অর্থ হচ্ছে শিক্ষক।
জীবনী[সম্পাদনা]

জালাল উদ্দিন রুমি সূফী অধ্যাত্মবাদীদের সাথে জড় হয়ছেন

উভয়পৃষ্ঠা অঙ্কিত প্রচ্ছদ, প্রথম বই কবিতা সংকলন “মসনবী”, ১৪৬১ পাণ্ডুলিপি

রুমির কবিতা খচিত প্রতিবিম্ভ পেয়ালা, ১৩শতকের প্রথমদিকে।ব্রকলিন মিউজিয়াম
রুমি জন্মগ্রহণ করেন স্থানীয় ফার্সি ভাষী মাতাপিতার কাছে,[১৮][১৯][২৬] যারা মুলত বালখ্‌ এর বাসিন্দা যা বর্তমানে আফগানিস্থান। তিনি হয় ওয়ালখ্‌স [২] যা বৃহৎ বালখ্‌ সম্রাজ্যের বালখ্‌স নদীর কাছে একটি গ্রাম যেটি বর্তমানে তাজাকিস্তান,[২] অথবা তিনি বালখ্‌ শহরে বর্তমান আফগানিস্থান এ জন্মগ্রহণ করেন।[৩][৪] বৃহৎ বালখ্‌ তখন ছিল ফার্সি সংস্কৃতি[২১][২৬][২৭] সূফী চর্চার মধ্যবিন্দু। যেটি বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রুমির পিতা ছাড়াও রুমির উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছেন তখনকার ফার্সি কবি আত্তার এবং সানাই।[২৮] রুমি তাঁদের গুণগ্রাহিতা করেছেনঃ “আত্তার হচ্ছে আত্না, সানাই হচ্ছেন তাঁর দু’চোখ, এবং সময় এরপরে, আমরা তাঁদের ট্রেনে ছিলাম”[২৯] এবং আরেকটি কবিতাতে স্মৃতিচারণ করেছেন “আত্তার ভালবাসার সাতটি নগরই ভ্রমন করেছেন আর আমি এখনও একটি গলির প্রান্তে অবস্তান করছি”।[৩০] তাঁর পৈতৃক দিক থেকে তিনি নাজিম উদ্দিন কুবরা এর বংশদর ছিলেন।[১১] তিনি তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় রুম সালাতানাত এর পারশ্যতে কাটিয়েছেন।[৩১][৩২][৩৩] যেখানে তিনি তাঁর কাজ রচিত করেছেন[৩৪] এবং ১২৭৩ ঈসায়ীতে ইন্তেকাল করেছেন। তাঁকে কোনিয়ায় সমাহিত করা হয় [৩৫] এবং সেটি এখন একটি তীর্থস্থান হয়ে উঠেছে। রুমির মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে সুলতান ওয়ালাদ এবং তাঁর অনুসারীরা “মৌলভী ক্রম” স্থাপন করে, এটিকে ঘূর্ণায়মান দরবেশও বলা হয়, যেটি সুফী নৃত্যে “সামা” এর জন্য বিখ্যাত। তাঁকে তাঁর পিতার কাছে শায়িত করা হয় এবং তাঁর দেহাবশেষ এ একটি জমকাল দরগাহ নির্মাণ করা হয়। শামস উদ্দিন আহমদ আফলাকী এর “মানকিব উল-আরিফিন”(১৩১৮ এবং ১৩৫৩ এর মধ্যে লেখা)তে এর বিস্তারিত রয়েছে। এই ঐতিহাসিক জীবনীগ্রন্থকে অত্যন্ত মূল্যবান বলা হয় কারণ এতে রুমি সম্পর্কে কিংবদন্তী এবং সত্য রয়েছে।[৩৬] উদাহরণস্বরূপ,ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো এর প্রফেসর ফ্রাঙ্কলিন লুইস এর লেখা রুমি এর জীবনী গ্রন্থে ইহা সম্পর্কে আলাদা একটি অধ্যায় রয়েছে।[৩৭]

রুমির পিতা বাহা উদ্দিন ওয়ালাদ ছিলেন বালখ্‌ এর একজন ধর্মতাত্ত্বিক, আইনজ্ঞ, এবং একজন অতীন্দ্রিবাদী। যিনি রুমি এর অনুসারীদের কাছে “সুলতান আল-উলামা” নামে পরিচিত। সবচেয়ে জনপ্রিয় জীবনিগ্রন্থ লেখকদের মতে তিনি ছিলেন খলীফা আবু বক্কর আলাইহিস সালাম উনার বংশদর, যদিও আধুনিক গবেষক-পণ্ডিতরা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।[৩৭][৩৮][৩৯] মায়ের দিক থেকে খোয়ারিজমীয় বংশদর দাবি করা হয়েছিল রাজবংশের সাথে যুক্ত করার জন্য কিন্তু এ দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয় কালানুক্রমিক এবং ঐতিহাসিক কারণে।[৩৭][৩৮][৩৯] সবচেয়ে সম্পূর্ণ বংশতালিকা করা হয়েছে তাঁর পরবিরারে যা ছয় থেকে সাত প্রজন্ম পর্যন্ত বিস্তৃত যেটি যুক্ত হয়েছে হানাফি ফকীহগণের সাথে।[৩৭][৩৮][৩৯] আমরা বাহা উদ্দিন এর মায়ের দিক থেকে নামের উৎস জানতে পারিনা, কিন্তু শুধুমাত্র তিনি তাঁকে “মামি”(ফার্সি ভাষায় মা এর চলিতরূপ)বলে উল্লেখ করেছেন[৪০] এবং তিনি ছিলেন খুবই সাধারণ একজন মহিলা যিনি ১৩ শতকে বাস করেছেন। রুমি এর মা ছিলেন মুইমিনা খাতুন। তাঁর পারিবারিক কাজ ছিল কয়েক প্রজন্ম ধরে ইসলাম ধর্মের হানাফী মাজহাবের প্রচারণা করা এবং পরিবারের এই ঐতিহ্যকে রুমি এবং সুলতান ওয়ালাদ অব্যাহত রেখেছেন। যখন মঙ্গোল মধ্য এশিয়া দ্বারা আক্রান্ত ১২১৫ এবং ১২২০ সাল এর মধ্যে, বাহা উদ্দিন ওয়ালাদ তাঁর পুরো পরিবার এবং একদল শিষ্য সহ পশ্চিমাভিমুখে রওনা হন। ঐতিহাসিকদের মতে যেটি রুমির শিষ্যদের দ্বারা একমত না, রুমির সাথে তখন পরাসীর সবচেয়ে জনপ্রিয় রহস্য কবি আত্তার এর দেখা হয় ইরানিয়ান শহর “নিশাপুর” এ। আত্তার সাথেসাথেই রুমির আধ্যাত্নিক বৈশিষ্ট চিনতে পেরেছিলেন। তিনি দেখতে পেলেন রুমি তাঁর পিতার পিছনে হেঁটে যাচ্ছেন এবং বললেন, “একটি হ্রদের পিছনে একটি সমুদ্র যাচ্ছে”। তিনি বালককে একটি বই প্রদান করলেন “আসরারনামা” নামে যেটি ইহজগতে আত্নাকে জড়িয়ে ফেলা সম্বন্ধে। এই সাক্ষাত আঠার বছরের রুমির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং পরবর্তিতে তাঁর কাজের উৎসাহ হিসাবে কাজ করেছে। নিশাপুর থেকে ওয়ালাদ এবং তাঁর লোকজন বাগদাদ এর দিকে রওনা হন এবং অনেক পণ্ডিত ও সূফীদের সাথে সাক্ষাত করেন।[৪১] বাগদাদ থেকে হজ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং মক্কায় হজ্জ পালন করেন। এরপর অভিযাত্রী কাফেলার দলটি দামেস্ক,মালাত্যেয়া, এরজিকান,শিবাস,কায়সেরি এবং নিগদি পাড়ি দেয়। এরপর তাঁরা কারামান এ সাথ বছর থাকে। রুমির মা এবং ভাই উভয়েই সেখানে মারা যায়। ১২২৫ সালে,কারামানে রুমি বিবাহ করেন গওহর খাতুন কে। তাঁদের দুটো ছেলেঃ সুলতাম ওয়ালাদ এবং আলাউদ্দিন চালাবী। যখন তাঁর স্ত্রী মারা যান রুমি পুনরায় বিবাহ করেন এবং তাঁর এক ছেলে, আমির আলিম চালাবী ও এক মেয়ে মালাখী খাতুন। ১২২৮ সালের ১ মে, আনাতোলিয়া শাসক আলাউদ্দিন কায়কোবাদ তাঁদেরকে আমন্ত্রণ জানান, বাহা উদ্দিন আনাতোলিয়া আসেন এবং আনাতোলিয়া এর কোনিয়াতে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন যেটি রুম সালাতানাত এর পশ্চিমাঞ্চল। বাহা উদ্দিন মাদ্রাসা এর প্রধান শিক্ষক হন এবং যখন তিনি মারা যান রুমির বয়স পঁচিশ বছর, উত্তরাধিকারসূত্রে তিনি তাঁর পিতার পদ পান একজন ইসলামিক মৌলভি হিসাবে। বাহা উদ্দিন এর একজন ছাত্র, সৈয়দ বুরহান উদ্দিন মোহাক্কিক তীরমিযি, রুমিকে শরীয়াহ এবং তরীকা সম্পর্কে শিক্ষা দিতে থাকেন বিশেষ করে তাঁর পিতার দিকগুলো। নয় বছর ধরে তিনি সূফীবাদ শিক্ষা গ্রহণ করেন বুরহান উদ্দিন এর শিষ্য হিসাবে যতদিন না তিনি মারা যান ১২৪০ বা ১২৪১ সালে। এরপর রুমির জনজীবন শুরু হয়ঃ তিনি একজন ইসলামী ফকিহ্‌ বা আইনজ্ঞ হন, ফতওয়া প্রকাশ করেন এবং কোনিয়ার মসজিদে নৈতিকতা বক্তৃতা দিতে থাকেন। তিনি মাদ্রাসাতে একজন মৌলভি হিসাবে কাজ করেন এবং তাঁর অনুগামীদের শিক্ষা দেন। এই সময়কালে রুমি দামেস্ক ভ্রমণ করেন এবং বলা হয়ে থাকে তিনি সেখানে চার বছর অতিবাহিত করেন। দরবেশ শামস তাবরিজি এর সাথে সাক্ষাৎ হয় ১৫ নবেম্ভর ১২৪৪ সালে যেটি তাঁর জীবন সম্পূর্ণরুপে বদলে দেয়। একজন সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষক এবং আইনজ্ঞ থেকে রুমি একজন সাধুতে রূপান্তরিত হন। শামস মধ্যপ্রাচ্যের সর্বত্র ভ্রমণ করে খুঁজছেন এবং বলছেন “কে আমার সঙ্গ সহ্য করিবে”। একটি কন্ঠ তাঁকে বলিল, “বিনিময়ে তুমি কি দিবে?” শামস উত্তর দিলেন, “আমার শির!!” কন্ঠটি আবার বলল, “তাহলে তুমি যাকে খুঁজছ সে কোনিয়ার জালাল উদ্দিন”। ১২৪৮ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে রুমি এবং শামস কথা বলছিলেন, এমন সময় কেউ শামসকে পিছনের দরজায় ডাকে। তিনি বের হয়ে যান এবং এরপর আর কোথাও কখনো দেখা যায়নি। গুজব শোনা যায় যে রুমির পুত্র আলাউদ্দিন এর মৌনসম্মতিতে শামসকে হত্যা করা হয়, যদি তাই হয় তাহলে শামস এই রহস্যময় বন্ধুত্তের জন্য তাঁর মাথা দিয়েছেন।[৪২]

শামস এর জন্য রুমির ভালবাসা এবং তাঁর মৃত্যুতে শোকের প্রকাশ তিনি করেছেন “দেওয়ান-এ শামস-এ তাবরিজী” কাব্যগ্রন্থে। তিনি নিজে শামসের খোঁজে বের হয়ে গেছেন এবং দামেস্ক ভ্রমণ করেছেন। সেখানে তিনি বুঝতে পারলেনঃ

আমি কেন তাকে খুঁজব?
সে আর আমি তো একই
তাঁর অস্তিত্ব আমার মাঝে বিরাজ করে
আমি নিজেকেই খুঁজছি![৪৩]

রুমি অনায়সে গজল রচনা করতে শুরু করলেন এবং সেগুলো “দেওয়ান-ই কবির” বা দেওয়ান শামস তাবরিজীতে সংগৃহীত করা হয়। রুমি আরেকজন সঙ্গী খোঁজে পান সালা উদ্দিন-ই জারকুব, একজন স্বর্ণকার। সালা উদ্দিন এর মৃত্যুর পর রুমির কেরাণী এবং প্রিয় ছাত্র হুসাম-এ চালাবি রুমির সঙ্গীর ভূমিকা পালন করেন। একদিন তাঁরা কোনিয়ার বাইরে একটি আঙুরক্ষেতে বিচরণ করছিলেন তখন হুসাম রুমিকে একটা ধারণা বললেনঃ “যদি আপনি একটি বই লিখেন যেমন সানাই এর “এলাহিনামা” বা আত্তার এর “মাতিক উত-তাইর” এর মত, যেটি অনেকের সঙ্গ দেবে। তারা আপনার কাজ থেকে হৃদয়পূর্ণ করবে এবং সংগীত রচনা করবে এটিকে সহবর্তমান থাকতে। রুমি মুচকি হাসলেন এবং এক টুকরো কাগজ বের করে তাঁর “মসনবী” এর প্রথম আঠারো লাইন লিখলেন,

বাঁশের বাঁশি যখন বাজে, তখন তোমরা মন দিয়া শোন, সে কী বলে,
সে তাহার বিরহ বেদনায় অনুতপ্ত হইয়া ক্রন্দন করিতেছে…
[৪৪]

হুসাম রুমিকে মিনতি করতে লাগলেন আরো লিখার জন্য। রুমি তাঁর পরের বারটি বছর আনাতোলিয়ায় তাঁর সেরা কাজ “মসনবী” এর ছয়টি খন্ডের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। ১২৭৩ সালের ডিসেম্বর এ রুমি অসুস্থবোধ করতে লাগলেন। তিনি তাঁর নিজের মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এবং অনেক জনপ্রিয় হওয়া একটি গজল রচনা করেন যার শুরু হয়ঃ

কিভাবে জানব কোন ধরণের রাজা আমার মধ্যে আছে আমার সহচর হিসাবে?
আমার উজ্জ্বল মুখে দৃষ্টি দিও না আমার বদ্ধ পাগুলোর জন্য।[৪৫]

১৭ ডিসেম্বর ১২৭৩ সালে রুমি কোনিয়ায় মারা যান। তাঁকে তাঁর পিতার কাছে সমাহিত করা হয় এবং যেটি একটি চমকপ্রদ ঘর, “ইয়াসিল তুর্ব”(সবুজ সমাধি, قبه الخضراء; যা বর্তমানে মাওলানা মিউজিয়াম), তাঁর কবরের উপর দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর সমাধিফলকে লেখাঃ

যখন আমি মৃত, পৃথিবীতে আমার সমাধি না খুঁজে, আমাকে মানুষের হৃদয়ে খুঁজে নাও। [৪৬]

জর্জিয়ার রাণী গুরসু খাতুন ছিলেন রুমির উৎসাহদাতা এবং কাছের বন্ধু। তিনি কোনিয়াতে রুমির সমাধি নির্মানে তহবিল প্রদান করেন।[৪৭] ১৩ শতকের মাওলানা মিউজিয়াম সহ তাঁর মসজিদ, থাকার জায়গা, বিদ্যালয় এবং মৌলভি তরীকার অন্যান্য ব্যাক্তিদের সমাধি দেখতে আজকেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম-অমুসলিমরা ছুটে যান। জালাল উদ্দিন যিনি রুমি নামে পরিচিত, তিনি ছিলেন ইসলামের একজন দার্শনিক এবং মরমী। তাঁর উপদেশ সমর্থন করে ভালবাসার মাধ্যমে অসীম পরমতসহিষ্ণুতা, ইতিবাচক যুক্তি, ধার্মিকতা, দানশীলতা এবং সচেতনতা। তিনি এবং তাঁর শিষ্যদের কাছে সকল ধর্মই অধিক বা কম সত্য। মুসলিম, খৃষ্টান এবং ইহুদীকে একই দৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন, তাঁর শান্তিপূর্ন এবং সহিষ্ণু শিক্ষাদান বা উপদেশ সকল ধর্মের মানুষের অন্তর স্পর্শ করেছে।

শিক্ষাদানঃ
“দেওয়ান-এ শামস-এ তাবরেজী” ১৫০৩ সালের একটি পৃষ্ঠার অনুকরণ
রুমি এর শিক্ষার সাধারণ বিষয়বস্তু ছিল অন্যান্য ফার্সি সাহিত্যের মরমী এবং সুফী কবিদের মত তাওহিদ শিক্ষা। তাঁর সাধনা অর্জনের ইচ্ছা এবং আকাঙ্কা প্রতিয়মান হয়ে উঠে তাঁর বই মসনবী এর নিম্নোক্ত কবিতায়ঃ[৪৮]

আমি পাথর হয়ে মরি আবার গাছ হয়ে জন্মাই
গাছ হয়ে মরি আবার পশু হয়ে জাগি,
পশু হয়ে মরি আবার মানুষ হয়ে জন্মাই
তাহলে ভয় কীসের? কীবা হারাবার আছে মৃত্যুতে?
পরবর্তি পদক্ষপে আমি মানুষের প্রকৃতিতে মারা যাব,
যাতে স্বর্গদূতদের সাথে আমার মাথা এবং ডানা উঁচু করতে পারি,
এবং অবশ্যই স্বর্গদূতদের নদী থেকে লাফ দিব,
সবকিছুই নশ্বর শুধুমাত্র তিনি(সৃষ্টিকর্তা) ছাড়া,
আবারও আমি স্বর্গদূতদের মধ্য থেকে উৎসৃষ্ট হব,
আমি কি হব তা আমার কল্পনার বাইরে,
তারপর আমি অস্তিত্বহীন হব; অস্তিত্বহীন আমকে বলে(সুরের মাধ্যমে) বাঁশির ন্যায়,
প্রকৃতপক্ষে, তাঁর কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন।

از جمادی مُردم و نامی شدم —
وز نما مُردم به حیوان سرزدم
مُردم از حیوانی و آدم شدم —
پس چه ترسم؟ کی ز مردن کم شدم؟
حملهٔ دیگر بمیرم از بشر —
تا برآرم از ملائک بال و پر
وز ملک هم بایدم جستن ز جو —
کل شیء هالک الا وجهه
بار دیگر از ملک پران شوم —
آنچه اندر وهم ناید آن شوم
پس عدم گردم عدم چو ارغنون —
گویدم کانا الیه راجعون

মসনবী রচিত হয় প্রতিদিনের দৃশ্য, কোরানের আয়াত এবং ব্যাখ্যা, জঠিল এবং বিশাল আধ্যাত্নবাদ থেকে।[৪৯] প্রাচ্যে বলা তাঁর সম্পর্কে বলা হয় যে সে “একজন নবী নয় কিন্তু এটা নিশ্চিত যে সে একটি ধর্মশাস্ত্র নিয়ে এসেছে”। রুমি প্রচন্ডভাবে বিশ্বাস করতেন যে সৃষ্টিকর্তার কাছে পৌছানোর রাস্তা হচ্ছে সঙ্গীত, কবিতা, এবং নৃত্য। রুমির কাছে, সঙ্গীত সাহায্য করে সমস্ত সত্তাকে পবিত্র করতে কেন্দ্রীভূত করে এবং এতই তীব্রভাবে যে আত্না একই সাথে ধ্বংস এবং পুনরুত্থিত হয়। এই ধারণা থেকে সূফী নৃত্য গড়ে উঠে। তাঁর শিক্ষা মৌলভি তরিকার ভিত্তি হয়ে উঠে, যেটি তাঁর ছেলে সুলতান ওয়ালাদ পূর্ণাঙ্গ করে ছিলেন। রুমি “সামা” এর পৃষ্ঠপোষক, এটি সঙ্গীত শোনার মাধ্যেমে পবিত্র ভাবে নর্তন করা। মৌলভি ঐতিহ্যের মধ্যে “সামা” প্রতিনিধিত্ব করে মন এবং ভালবাসার মাধ্যমে একের নিকট আধ্যাত্মিক আরোহণের এক রহস্যময় ভ্রমণ। এই ভ্রমণে অন্বেষক প্রতিকীভাবে সত্যের দিকে ফিরে,ভালবাসা বৃদ্ধি, অহং পরিত্যাগ, সত্যের সন্ধান পায় এবং নির্ভুল একের নিকট পৌছায়। এরপর অন্বেষক আধ্যাত্মিক ভ্রমণ থেকে ফেরে, পরিপক্কতা লাভের মাধ্যমে সৃষ্টিকে ভালবাসতে এবং সেবা করতে।

মসনবীর অন্য একটি স্তবকে রুমি বর্ণনা করেছেন সার্বজনিন ভালবাসার বার্তাঃ

ভালোবাসার উদ্দেশ্য অন্য সব উদ্দেশ্য থেকে ভিন্ন
ভালোবাসা হলো ঈশ্বরের রহস্যপুঞ্জের জ্যোতির্বিজ্ঞান।[৫০]

রুমির প্রিয় বাদ্যযন্ত্র ছিল “নে”(এক ধরণের বাঁশি)।[১২]
প্রধান কাজসমূহ[সম্পাদনা]

উসমানীয় যুগের একটি পুঁথি যেখানে রুমি এবং শামস তাবরিজী সম্পর্কে চিত্রিত করা হয়।
রুমির কাব্যকে মাঝেমধ্যে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়ঃ চতুষ্পদী শ্লোক এবং গজল। গদ্যসমূহকে ভাগ করা হয় প্রবন্ধ, পত্র, এবং “সাতটি ধর্মাপদেশ” এ।

কাব্যঃ
মাতনাওয়ে মানাউয়ি
মাওলানা জাদুঘর,কোনিয়া, তুর্কি
রুমির প্রধান কাজ হচ্ছে “মাতনাওয়ে মানাউয়ি”(আধ্যাত্মিক দ্বিপদী; مثنوی معنوی), একটি ছয় খন্ডের কবিতা কয়েকজন সূফী এটিকে বিবেচনা করেন[৫১] ফার্সি ভাষার কুরআন হিসাবে। অনেকে একে তুলনা করেন যে সেরা অতীন্দ্রি়বাদী কবিতার কাজগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে।[৫২] এতে প্রায় ২৭,০০০ লাইনের ফার্সী কবিতা রয়েছে। [৫৩]
রুমির আরেকটি প্রধান কাজ হচ্ছে “দেওয়ান-এ-কবির”(“প্রধান কাজ”) বা “দেওয়ান-এ শামস তাবরিজী”(শামস তাবরিজী এর কাজ); دیوان شمس تبریزی), যেটি নামকরণ করা হয় রুমির শিক্ষক শামস তাবরিজীর নামে। এছাড়া এতে ৩৫০০০ ফার্সী দ্বিপদী এবং ২০০০ ফার্সী শ্লোক আছে,[৫৪] এতে ৯০টি গজল এবং ১৯টি শ্লোক আছে আরবি ভাষায়,[৫৫] এছাড়া প্রায় চব্বিশটি দ্বিপদী তুর্কি ভাষায় [৫৬][৫৭] এবং ১৪টি দ্বিপদী গ্রীক ভাষায়।[৫৮][৫৯][৬০]

গদ্যঃ
ফি মা ফি ( এর মধ্যে যা আছে তাই আছে ফার্সীঃ فیه ما فیه) এটি একাত্তরটি আলোচনা এবং বক্তৃতার সংগ্রহ যেটি রুমি তাঁর ছাত্রদের দিয়েছিলেন। এটি প্রণীত হয়েছিল রুমির ছাত্রদের টীকা থেকে তাই রুমি এই বইয়ের সরাসরি লেখক নন।[৬১] এর ফার্সি থেকে ইংরেজি একটি অনুবাদ প্রথম প্রকাশ করেন এজে আরেবেরি “ডিসকোর্স অব রুমি” নামে ১৯৭২ সালে, দ্বিতীয় অনুবাদ বের করেন হুইলার থাকসন “সাইন অব আনসিন” নামে ১৯৯৪ সালে। ফি মা ফির রচনার ধরণ ছিল চলিত ভাষায় এবং এটি ছিল মধ্যভিত্ত পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য এবং বাস্তবধর্মী শব্দের অভাব ছিল।[৬২]
মজলিস-এ সভা (সাতটি সভা, ফার্সি: مجالس سبعه) এর মধ্যে সাতটি ফার্সি ধর্মাপদেশ বা বক্তৃতা ছিল যেটি সাতটি ভিন্ন সমাবেশে এ দেয়া হয়েছিল। এই ধর্মাপদেশগুলো ব্যাখ্যা করে কোরআন এবং হাদীসের গভীর অর্থ। এতে আরো বিভিন্ন কবির কবিতা থেকে উক্তি রয়েছে যার মধ্যে আছে সানাই, আত্তার এবং আরো অনেক কবি ও রুমি নিজে। আফলাকি বর্ণনা করেন, শামস এ-তাবরিজী এর পর, রুমি এই ধর্মাপদেশগুলো দেন বিশিষ্টদের অনুরোধে বিশেষ করে সালাহ উদ্দিন জারকুভ। ফার্সি এর ধরণ একদম সাধারণ কিন্তু আরবী উক্তি এবং ইতিহাসের জ্ঞান ও হাদীসসমূহ প্রদর্শন করে ইসলামী বিজ্ঞানের প্রতি রুমির জ্ঞানকে।[৬৩]
মাকাতিব (চিঠিসমূহ , ফার্সি: مکاتیب) এই মধ্যে রুমির চিঠি ফার্সিতে যেগুলো তিনি তাঁর ছাত্রদের, পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রীয় ব্যাক্তিবর্গ এবং অন্যান্য প্রভাবশালীদের কাছে দিয়েছিলেন। চিঠিগুলো সাক্ষ্য দেয় যে রুমি বেশ ব্যাস্ত ছিলেন তাঁর পরিবারে সদস্যদের সাহায্যে এবং তদারিক করেছেন তাঁর আশে পাশে বেড়ে উঠা শিষ্যদের। তাঁর পূর্বের দুটি কাজের সাথে এটি অসদৃশ, চিঠিগুলো সজ্ঞানে বাস্তবধর্মী এবং পত্রসম্বন্ধীয়, যেগুলো সাধারণত সম্ভ্রান্ত ব্যাক্তিবর্গ, কূটনীতিবিদ এবং রাজাদের কাছে লেখা।[৬৪]

ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিঃ
এটা অনস্বীকার্য যে রুমি ছিলেন একজন মুসলিম পণ্ডিত এবং ইসলামকে তিনি গম্ভীরভাবে নিয়েছেন। তবুও, তার আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গির গভীরতা সম্প্রসারিত হয়েছে সীমিত সাম্প্রদায়িক সংস্পর্শে। তার একটি কবিতায়ঃ


در راه طلب عاقل و دیوانه یکی است
در شیوه‌ی عشق خویش و بیگانه یکی است
آن را که شراب وصل جانان دادند
در مذهب او کعبه و بتخانه یکی است

অন্বেষণকারীদের পথে জ্ঞানী- মূর্খ সব একই।
তাঁর ভালোবাসায় পরিচিত-অপরিচিত সব একই।
এগিয়ে যাও! ভালোবাসার অমৃত সুধা পান করো।
সে বিশ্বাসে, মুসলিম-পৌত্তলিক সব একই।

[৬৫]

পবিত্র কোরআন অনুযায়ী, হযরত মোহাম্মদ সাল্লালাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সৃষ্টিকর্তা পাঠিয়েছেন সকল সৃষ্টির জন্য, যার মধ্যে সমগ্র মানবাজাতি রয়েছে।[৬৬] এ সম্পর্কে রুমি বলেনঃ

"মুহাম্মদের আলো কোন অগ্নিপুজারি বা ইহুদিকে পরিত্যাগ করে না। তাঁর সৌভাগ্যের ছায়া যেন সবার উপর উজ্জ্বল হয়! তিনি সুপথে নিয়ে আসেন যারা পথভ্রষ্ট হয়েছিল মরুভূমিতে।"[৬৭]

রুমির অনেক কবিতায় সুপারিশ করে বাহ্যিক ধর্মীয় রীতি এবং কোরাআনের প্রধান স্থানের গুরুত্বকে।[৬৮]

আল্লাহর কোরআনের কাছে যাও, তাতে আশ্রয় নাও
সেখানে নবীর আত্নার সাথে মিশ
বইটি বহন করে নবীর বিভিন্ন অবস্থার কথা
সমুদ্রের ন্যায় তাঁর পবিত্র মহিমা প্রকাশ কর।[৬৯]

রুমি বলেন

যতক্ষণ পর্যন্ত আমার প্রাণ আছে আমি কোরআনের দাস।
আমি মোহাম্মদের রাস্তার ধূলিকণা, নির্বাচিত ব্যাক্তি।
যদি কেউ আমার বলা বাণী ছাড়া অন্য কিছু আমার নামে চালায়,
আমি তাকে ত্যাগ করব সেসকল শব্দের প্রতি ক্ষুব্দ হয়ে। [৭০]

রুমি আরও বলেনঃ

“ “আমি আমার দুই চোখকে “বিরত” রেখেছি
এই পৃথিবী আর আখিরাতের অভিলাষ থেকে যা আমি মুহাম্মদ থেকে শিখেছি।”[৭১]

মসনবীর প্রথম পৃষ্ঠায় রুমি বলেনঃ

"হাধা কিতাবুল- মসনবী ওয়া হুয়া উসুলু উসুলি উসুলিদ-দ্বীন ওয়া কাশুশাফুল –কোরআন"
"এই হচ্ছে মসনবী বই, এবং এটি (ইসলাম)ধর্মের মূলের মূলের মূল এবং এটি কোরআনের বর্ণনাকারী।"[৭২]

সাঈদ হুসাইন নাসের বলেনঃ

রুমির সময়কার একজন মহান জীবিত ব্যাক্তিত্ব ছিলেন হাজি হাজরী, তিনি রুমির দেওয়ান এবং মসনবীতে অপ্রকাশিত প্রায় ৬০০০ এর মত পদ্য দেখান, যেগুলো কোরআনের আয়াতের সরাসরি ফার্সী কবিতাতে অনুবাদ।[৭৩]

রুমি দেওয়ান এ বলেন

সুফী হচ্ছে মোহাম্মদকে আবু বকর এর মত আকড়ে ধরা। [৭৪]

রুমি আরো বলেনঃ

“মোহাম্মদের আলো আরো এক হাজার প্রশাখা হল(জ্ঞানের), এক হাজার, যাতে এখনকার জীবন এবং এর পরবর্তী জীবনে এটি সর্বশেষ সীমা পর্যন্ত কবলিত হয়। যদি মোহাম্মদের চেরা থেকে এরকম একটি শাখা খুলে, হাজারও ভিক্ষু এবং যাজক তাদের মিথ্যা বিশ্বাসের দড়িকে তাদের কোমর থেকে ছিঁড়ে ফেলবে।”[৭৫]

তার মসনবীতে রয়েছে কোরআন এবং হাদিসে বর্ণিত উপাখ্যান এবং গল্প, পাশাপাশি প্রতিদিনকার উপকথা।

তাৎপর্যঃ
রুমির কবিতা ভিত্তি গঠন করে ইরান এবং আফগান সংগীতের। তার কবিতার সমসাময়িক সর্বোত্তম অনুবাদ করেন মোহাম্মদ রেজা সাজারিয়ান, শাহরাম নাজেরি, দাবুদ আজাদ(এই তিন জন ইরানের) এবং উস্তাদ মোহাম্মদ হাশেম চিশতী(আফগানিস্তান)। অনেক আধুনিক পাশ্চ্যাতের লোকদের কাছে সুফিবাদ দর্শন এবং ব্যাবহার পরিচিতিতে তার শিক্ষা হচ্ছে সর্বোত্তম। পশ্চিমা বিশ্বে শাহরাম শিবা প্রায় বিশ বছর ধরে রুমির কবিতা শিক্ষা, প্রতিপাদন, পরিবেশন এবং অনুবাদ করে আসছেন এবং যেটি রুমির ইংরেজি ভাষী দেশসমূহে রুমির তাৎপর্য বিস্তারে সহয়তা করে আসছে। পাকিস্তানের জাতীয় কবি মোহাম্মদ ইকবাল রুমির কাজ দ্বারাই অনুপ্রাণিত, এবং তাকে আত্নিক পথ পদর্শক হিসাবে দেখেন এবং তাকে “পীর রুমি” বলে সম্বোধন করেন তার কবিতাগুলোতে(সম্মানার্থে পীর শব্দটি ব্যাবহৃত হয় যার অর্থ প্রতিষ্ঠাকারী, শিক্ষক কিংবা পথ পদর্শক)[৭৬] শাহরিন শিবা দাবি করেন, “রুমি উচ্চ ব্যাক্তিসত্তা সম্পন্ন এবং মাঝেমধ্যে ব্যাক্তিগত বৃদ্ধি এবং উন্নতির জগতকে গুলিয়ে ফেলেন একটি স্পষ্ট এবং সরাসরি ছন্দে। তিনি কখনো কারো উপর ক্ষুব্দ হন না এবং তিনি সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করেন... আজকে রুমির কবিতা গীর্জা, সিনাগগ(ইহুদী ধর্মস্থান), মঠ এ শুনা যায় পাশাপাশি নিউ ইয়র্কের সংগীত অনুষ্ঠানেও।” প্রফেসর মজিদ এম. নাইনি এর মতে,[৭৭] “রুমির জীবন এবং রুপান্তর সত্যিকারের সাক্ষ্য এবং প্রমাণ যে সকল ধর্মের লোক একসাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারবে। রুমির দৃষ্টিভঙ্গি, শব্দসমূহ, এবং জীবন আমাদের শিক্ষা দেয় কিভাবে আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ শান্তি এবং সুখ পাব যাতে করে আমরা ক্রমাগত শত্রুতা এবং ঘৃণার প্রবাহ বন্ধ করতে পারি এবং সত্যিকারের বিশ্ব শান্তি এবং ঐক্য অর্জন করতে পারি।” রুমির কবিতা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে যার মধ্যে রুশ, জার্মান, উর্দু, তুর্কি, আরবী, বাংলা, ফরাসী, ইতালীয়, এবং স্প্যানিশ, এবং উপস্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন ধরণের উপর যার মধ্যে সঙ্গীতানুষ্ঠান, কর্মশালা, অধ্যায়ন, নৃত্যানুষ্ঠান এবং অন্যান্য শৈল্পিক সৃষ্টিতে।[৭৮] সোলেমান বার্খসের করা রুমির কবিতার ইংরেজী অনুবাদ সারা বিশ্বব্যাপী পাঁচ লক্ষেরও বেশি কবি বিক্রিত হয়েছে,[৭৯] এবং যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে পঠিত কবির মধ্যে রুমি অন্যতম।[৮০] শাহরাম শিবার বই “রেন্ডিং দ্য ভেইলঃ লিটারাল এন্ড পয়েটিক ট্রান্সলেশন অব রুমি”(১৯৯৫) বইটি বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন পুরুষ্কার লাভ করে। রুমির কবিতার রেকর্ডিং যুক্তরাষ্ট্রের বিলবোর্ডের সেরা ২০ এর তালিকায় প্রবেশ করে। মার্কিন লেখকদের বাছাই করা দীপক চোপড়ার সম্পাদনা করা ফেরুদন কিয়া অব রুমি অনুবাদ করা প্রেমের কবিতাগুলো মঞ্চায়ন করেন হলিউড ব্যাক্তিত্বরা যেমন ম্যাডোনা, গোল্ডি হওন, ফিলিপ গ্লাস এবং ডেমি মুর।

ভারতে উত্তরাঞ্চলে দর্শনীয় স্থান আছে যেটি রুমি দরজা বা রুমি গেইট নামে পরিচিত, এটি লাখনাও(উত্তর প্রদেশ এর রাজধানী)তে অবস্থিত যেটি রুমির নামে নামকরণ করা হয়।

১৯৮১-১৯৯৪ সালের তুরস্কের ৫০০০ লিরা(টাকা) নোটের পিছনে রুমি এবং তার সমাধিস্তম্ভ
রুমি এবং তার সমাধিস্তম্ভ চিত্রিত করা হয় তুরস্কের ৫০০০ লিরা নোটের পিছনে ১৯৮১-১৯৯৪ সাল পর্যন্ত।[৮১]

ইরানী বিশ্বঃ
پارسی گو گرچه تازی خوشتر است — عشق را خود صد زبان دیگر است

সকল পারশ্যের লোক যদি বলে আরবি ভাষা উত্তম — প্রেম তার পথ খুজে নেবে সকল ভাষার মধ্যে নিজস্ব ভাষায়।

এসকল সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং ভাষাগতভাবে রুমির সাথে ইরানের বন্ধন রুমিকে ইরানের একজন তারকা কবি হিসাবে সৃষ্টি করেছে, গুরুত্বপূর্ন রুমি পণ্ডিতরা যার মধ্যে আছেন ফরুজানফার, নাইনি, শাবজেওয়ারি প্রমুখ এসেছেন আধুনিক ইরান থেকে।[৮২] রুমির কবিতা চিত্রিত করা হয়েছে ইরানের বিভিন্ন শহরের দেয়ালে, গাওয়া হয়েছে ফার্সি সংগীত হিসাবে,[৮২] এবং বিদ্যালয়ের পাঠ্যবইয়ে পড়া হয়।[৮৩]

মৌলভি সুফী ক্রমঃ
মৌলভী সুফি ক্রম প্রতিষ্ঠা করেছে রুমির শিষ্যরা ১২৭৩ সালে তাঁর মৃত্যুর পর।[৮৪] তাঁর প্রথম সফলকারী এই ক্রমের ছিলেন “হুসাম চালাবি” নিজে, রুমির ছোট এবং একমাত্র ছেলে সুলতান ওয়ালাদ(মৃত্যু ১৩১২সালে) এর মৃত্যুর পর যিনি “মসনবী রবনামা” বইয়ের জন্য পরিচিত এবং তাকে এই ক্রমের প্রধান করা হয়।[৮৫] তখন থেকে এই ক্রমের নেতৃত্ব কোনিয়ার রুমির পরিবারের মধ্যে রাখা হয় অবিচ্ছেদ্ধ ভাবে।[৮৬] মৌলভী সুফিরা ঘূর্ণায়মান দরবেশ নামে পরিচিত, যারা সামার মাধ্যমে জিকির করে। রুমির সময়ে(“মানকিবুল আরেফিন” কর্তৃক সত্যায়িত) তার শিষ্যরা জমা হতেন সুরেলার জন্য এবং অনুশীলন করত। ঐতিহ্যমতে রুমি নিজে একজন গুরুত্বপূর্ণ সুরকার ছিলেন যিনি রভাব বাজিয়েছেন, যদিও তাঁর প্রিয় বাদ্যযন্ত্র ছিল বাঁশি।[৮৭] সামার সময় যে সুর সহচর হয় তা হচ্ছে “মসনবী” এবং “দেওয়ান-এ কবির” এর কবিতা বা সুলতান ওয়ালাদের কবিতা।[৮৭] উসমানীয় সম্রাজ্যের সময় মৌলভী ক্রম সু-প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং ক্রমের অনেক সদস্যরাই বিভিন্ন সরকারী পদে খেলাফতের সময় দায়িত্ব পালন করেন। মৌলভী ক্রমের কেন্দ্র হচ্ছে কোনিয়ায়। সেখানে একটি মৌলভী আশ্রমও আছে(درگاه, দরগাহ) ইস্তানবুলে গালাতা টাওয়ারের পাশে যেখানে সামা সম্পাদন করা হয় এবং এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। মৌলভী ক্রম সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে আমন্ত্রণ করেঃ

আসো, আসো তুমি যেই হউনা কেন
মুসাফির, নামাজি, সন্যাসী
কিছুই ব্যাপার না।
আমাদের এই ক্যারাভান নিরাশার নয়,
আসো যদিও তোমার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হয়েছে হাজারবার
আসো, আবারো, আসো আসো।[৮৮]


তুরস্কের কোনিয়াতে রুমির সমাধি।
উসমানীয় সম্রাজ্যের সময় মৌলভী ক্রম থেকে উদ্ভূত হয় উল্লেখযোগ্য কবি এবং শিল্পীর যার মধ্যে আছে শেখ গালিব, আনকারার ইসমাইল রুশি দেদে, ইসরার দেদে, হালেত ইফান্দী, এবং গাভসী দেদে, যাদেরকে ইস্তানবুলের গালাতা মৌলভী খানায় সমাহিত করা হয়।[৮৯] সুর, বিশেষ করে বাঁশি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মৌলভী ক্রমে। আধুনিক ভিত্তির সাথে, ধর্মনিরপেক্ষ তুর্কি প্রজাতন্ত্রতে মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক জনগণের নীতি থেকে ধর্ম সরিয়ে ফেলেন এবং এটিকে সীমাবদ্ধ করেন ব্যাক্তিগত ইচ্ছা, আচরণ এবং বিশ্বাসের মধ্যে। ১৯২৫ সালের ডিসেম্বরের ১৩ তারিখে একটি আইন চালু হয় যেটি সকল খানকা(দরবেশদের থাকার জায়গা) এবং যাওয়াইস(প্রধান দরবেশের থাকার জায়গা)বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শ্রদ্ধার জন্য একটি কেন্দ্র গড়া হয় যেখানে “জিয়ারতের” জন্য যাওয়া হয়। শুধুমাত্র ইস্তানবুলেই ছিল ২৫০টিরও বেশি “টেক্কে” এবং ছোট ছোট কেন্দ্র ছিল বিভিন্ন সমিতির জমায়েতের জন্য। এই আইনটি সুফি ক্রম ভেঙ্গে ফেলে এবং রহস্যময় বা দুর্বোধ্য নাম, উপাধি এবং উপাধি সংক্রান্ত পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়, ক্রমের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়, এবং তাদের উৎসব ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। আইনটিতে শাস্তির বিধানও রাখা হয় যদি কেউ ক্রমটি পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্ঠা করে। দুই বছর পর, ১৯২৭ সালে, মাওলানা জাদুঘর নামে একটি জাদুঘর খোলার অনুমতি দেয়া হয় কোনিয়ায়।[৯০]

১৯৫০ দশকে, তুরস্ক সরকার কোনিয়ায় প্রতি বছর একবার ঘূর্ণয়মান দরবেশ পালন করার অনুমতি দেয়। মাওলানা উৎসব প্রতি বছর ডিসেম্বরের দুই সপ্তাহব্যাপী পালিত হয়, এটি তুঙ্গী পায় ১৭ই ডিসেম্বর, মাওলানার উরসে(রুমির মৃত্যু বার্ষিকী), যেটিকে বলা হয় “শবে উরস” (شب عروس) (ফার্সি অর্থ “তরুণ রাত্রি”), যে রাতে রুমি সৃষ্টিকর্তা কাছে পৌছান।[৯১] ১৯৭৪ সালে, ঘূর্ণয়মান দরবেশদের অনুমতি দেয়া হয় প্রথমবারের পশ্চিমে ভ্রমণ করার। ২০০৫ সালে ইউনেস্কো ঘোষণা করে তুরস্কের “মৌলভী সামা উৎসব” “মৌখিক এবং স্পর্শাতীত সেরা শিল্পকর্মের মানুষের ঐতিহ্য”।[৯২]

ধর্মীয় আখ্যাঃ
এডওয়ার্ড জি. ব্রাউনির মতে তিনজন সবচেয়ে নিগূঢ় ফার্সি কবি হচ্ছেন রুমি, সানাই এবং আত্তার যারা ছিলেন সুন্নি মুসলমান এবং তাদের কবিতা প্রথম দুই খলিফা আবু বকর এবং উমর ইবনুল খাত্তাব এর প্রচুর প্রশংসা করা হয়।[৯৩] আন্নেমারি সিমেল এর মতে, শিয়া কবিদের প্রবণতার মধ্যে অগ্রবর্তী হচ্ছেন নিগূঢ় কবি রুমি এবং আত্তার তাদের নিজস্ব পদে, ১৫০১ সালে সাফাভি সম্রাজ্যের সময় দ্বাদশবাদি শিয়া প্রদেশের ধর্ম হিসাবে পরিচিতির লাভের পরেই শক্তিশালী হয়ে উঠেন।[৯৪]

আটশতম জন্মদিন পালনঃ

আফগানিস্তানে রুমি “মাওলানা” নামে পরিচিত, তুরস্কে “মওলানা” এবং ইরানে “মৌলভী” নামে পরিচিত। ২০০৭ সালে রুমির জন্মদিন ইউনেস্কোর সহযোগিতায় “শান্তিতে মানুষের মন গঠনের” লক্ষে কার্যনির্বাহী সমিতি এবং সাধারণ সভায় আফগানিস্তান, ইরান এবং তুরুস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি প্রস্তাব করা হয় এবং অনুমোদন দেয়া হয়।[৯৫] ইউনেস্কো এর মধ্যে ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ এ স্মৃতিরক্ষা উৎসব পালন করে।[৩] ইউনেস্কো একটি পদক ঘোষণা দেয় রুমির নামে যাতে করে এটি উৎসাহিত করে রুমির উপর গবেষণা এবং যারা রুমির চিন্তা এবং আদর্শ প্রচারণা করছে যেটি ইউনেস্কোর আদর্শিক দায়িত্ব বাড়াতে সহায়তা করে।[৪]

আফগানিস্তানের সংস্কৃতি এবং যুব মন্ত্রণালয় একটি জাতীয় পরিষদ গঠন করে, যেটি আন্তর্জাতিক দার্শনিক এবং কবিদের জন্মদিন পালন করে সেমিনারের আয়োজন করে এবং জীবনী নিয়ে আলোচনা করে। এতে বুদ্ধিজীবী, কূটনীতিবিদ এবং মাওলানার অনুসারীদের মহাসমাবেশ ঘটে মাওলানার জন্মস্থান বালখ এ এবং এটি অনুষ্ঠিত হয়কাবুলে।[৯৬]

২০০৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ইরানে স্কুল বেল বাজানো হয় সারাদেশজুড়ে মাওলানাকে সম্মান প্রদর্শনের লক্ষে।[৯৭] একই বছর, ইরানে ২৬ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত রুমি সপ্তাহ পালন করা হয়। একটি অনুষ্ঠান এবং সম্মেলন তেহরানে অনুষ্ঠিত হয়, এটি উদ্বোধন করেন ইরানের রাষ্ট্রপতি এবং ইরানের সংসদের চেয়ারম্যান। ঊনত্রিশটি দেশ থেকে পণ্ডিতরা সেখানে যান এবং সম্মেলন ৪৫০টি নিবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।[৯৮] ইরানি শিল্পী শাহরাম নাজেরিকে “লিজিওন ডি’অনার” দেয়া হয় এবং ২০০৭ সালে ইরানের জাতীয় সংগীত পুরুষ্কার দেয়া হয় রুমির মাষ্টারপিসের উপর তার খ্যাতনামা কাজের জন্য।[৯৯] ইউনেস্কো ২০০৭ সালকে ঘোষণা দেয় “আন্তর্জাতিক রুমি বর্ষ” হিসাবে।[১০০][১০১]



৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ এ, তুরস্কে পালন করা হয় রুমির আটশতম জন্মবার্ষিকী একটি বিশাল ঘূর্ণয়মান দরবেশদের সামার মাধ্যমে যেটি আটচল্লিশটি ক্যামেরা দ্বারা টেলিভিশনে প্রচার করা হয় সরাসরি আটটি দেশে। তুরস্কের সংস্কৃতি এবং পর্যটন মন্ত্রী ইর্তুগাল গুয়ানী বলেন, “তিনশরও বেশি দরবেশ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে বলে ঠিক করা হয়েছে, এটি সামা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান হবে।”[১০২]

[সংগৃহীত]
অমৃত বাণী Amrit Saying's
#AmritSayings #SufiSaying 

Monday, November 9, 2020

হযরত উসমান (রা.)′র কিছু মহামূল্যবান - “অমৃত বাণী”...





“দুনিয়ার চিন্তায় অন্ধকার আসে। আর আখিরাতের চিন্তাই আলোর সৃষ্টি হয়।”

“যার মনে উত্তম পোশাকের প্রতি লোভ সৃষ্টি হয় তার উচিত স্বীয় অন্তিম পোশাক কাফনের কথা স্মরন করা। বিলাশবহুল অট্রালিকার জন্য যারা ব্যকুল হয়, তারা যেন সংকীর্ন কবরবাসের কথা একবার ভেবে দেখে। উত্তম পানাহারের মাধ্যমে যারা শরীর গঠনের কথা ভাবে, তারা যেন স্বীয় মৃতদেহের শেষ পরিনতির কথা একটু চিন্তা করে।”

“হাজার অসৎ বন্ধুর চেয়ে, একজন গরীব সৎ বন্ধুর সাথে চলাফেরা করা অতি উওম।”

“নিকৃষ্ট পাপী ঔ ব্যাক্তি যে অন্যের দোষ খুঁজতে গিয়ে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করে।”

“সুদীর্ঘ হায়াত পেয়েও আখিরাতের প্রস্তুতি নিতে না পারাই হল তোমার জীবনে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।”

“যে কাজের লক্ষ্য আখিরাত নয়, তা নিতান্তই অর্থহীন...!”

“নিজের অপরাধ যতই আড়াল করতে চান না কেন, মানুষের অনুসন্ধানী চোখ তা খুজে বের করবেই; আর এটাই দুনিয়ার নিয়ম।”

“মানুষ প্রতিদিন তার মতো, মানুষকে মৃত্যুবরন করতে দেখে। কিন্তু নিজের মৃত্যুর কথা ভূলে যায়।”

“তরবারীর আঘাত দেহকে জখম করে আর কটুকথা আত্নাকে জখম করে।”

—হযরত উসমান (রা.)
অমৃত বাণী Amrit Saying's
#AmritSaying #SufiSaying

Saturday, November 7, 2020

হযরত মওলানা ছৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল মালেক শাহ্ (কঃ)'র কিছু মহামূল্যবান কালাম মোবারক। "অমৃত বাণী"



“কালেমা মুখে বলা শরীয়ত; কালেমার অর্থ মতে মনে চিত্র অঙ্কন তরিকত। ঐ চিত্র লাভ হাকিকত। ঐ চিত্র মতে পূর্ণ পরিচয় পাওয়া মারেফত।”

“যেথায় অন্ধকার বর্তমান,
তথায় আলোক শিখা অনুপস্থিত
যেই মাত্র আলোক শিখা উপস্থিত হয়,
তৎক্ষণাৎ নিশ্চিত ভাবে অন্ধকার বিলুপ্ত হয়।”

“মেজাজি মসজিদে, গিয়ে আদায় কর নামাজে কায়েম, হাকিকী মসজিদে গিয়ে, হাসেল করো নামাজে দায়েম।”

“যে খোদাকে চেনে না, তার জন্য দোযখ আজাব! যে খোদাকে চেনে! সে দোযখের জন্য আজাব।”

“ঈমানদারের খোদা সন্নিকট,
বেঈমানের খোদা দূরে।”

“আখেরাত প্রত্যাশীদের জন্য দুনিয়া হারাম! দুনিয়া প্রেমিকদের জন্য আখেরাত হারাম! আল্লাহ্ তালাশীদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাত উভয় হারাম!”

“(তোমার) বিভেদ-প্রতিহিংসা (ফেরকাহ-পরস্তি) সব শেষ হলে তবেই (তুমি) তৌহিদে পৌছলে।”

“ছায়েমুর রমজান জান ত্রিশ পূরণে,
ছায়েমুদ্দাহার জান ছয়ই গুনে।”
—হযরত শাহ ছুফী মওলানা ছৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল মালেক শাহ (কঃ) আল রাহে ভান্ডারী
অমৃত বাণী Amrit Saying's
#AmritSayings #SufiSayings

Friday, November 6, 2020

Welcome To - অমৃত বাণী Amrit Saying's



“মনের যাতনা দেহের যাতনার চেয়ে বেশি!
  যদি আপনি সেভাবে রাখতে পারেন!”
অমৃত বাণী Amrit Saying's
#AmritSayings #SufiSayings
E-mail: shahab2info@gmail.com

SHAHAB UDDIN : Sufi Lesson | তাসাউফ শিক্ষা | الـدّروس الصّـوفـيّـ...

SHAHAB UDDIN : Sufi Lesson | তাসাউফ শিক্ষা | الـدّروس الصّـوفـيّـ... : Sufi Lesson | তাসাউফ শিক্ষা | الـدّروس الصّـوفـيّـة Inauguration Cere...